ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৫ পৌষ ১৪৩১

সীমান্ত পেরিয়ে মৈত্রী ! দিল্লি কি অবশেষে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে চাইছে?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৫ এএম | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২০ এএম

 

জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ঘটার পর পাঁচ মাসের ওপর কেটে গেছে। গত বছরের পাঁচ অগাস্টের পর প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কেও দেখা গেছে নাটকীয় অবনতি – যা এখনও 'স্বাভাবিক' হয়েছে মোটেই বলা যাবে না।গত কয়েকমাসে দুটো দেশের সরকার নিজেদের মধ্যে যে ঠিক 'বন্ধুপ্রতিম' ব্যবহার করেনি, সেটাও দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।তা সত্ত্বেও খুব সম্প্রতি এমন কিছু কিছু লক্ষণ দু'পক্ষ থেকেই দেখা যাচ্ছে, যা থেকে দিল্লিতে অন্তত কোনও কোনও পর্যবেক্ষক ধারণা করছেন নতুন বছরে হয়তো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটা উন্নতির সম্ভাবনা আছে।এর কারণটা খুব সহজ, তাগিদ আছে দু'পক্ষেরই!

 

ভারত ও বাংলাদেশকে যে পরস্পরের স্বার্থেই নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক, স্ট্র্যাটেজিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে 'মোটামুটি একটা সুসম্পর্ক' রেখে চলতে হবে, এই উপলব্ধিটা ধীরে ধীরে আবার ফিরে আসছে এবং তার রাস্তাটা খুঁজে বের করারও চেষ্টা চলছে বলে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন।তবে, তারা সেই সঙ্গেও এটা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, ভারতের দিক থেকে এই প্রচেষ্টা হবে পুরোপুরি 'শর্তাধীন' – অর্থাৎ ভারতের দেওয়া বিশেষ কয়েকটি শর্ত পূরণ না হলে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দিল্লি সম্ভবত খুব একটা গরজ দেখাবে না।

 

আর এর মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু তথা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কিংবা পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো অতি স্পর্শকাতর বিষয়ও থাকতে পারে।সামরিক বা নিরাপত্তাগত স্বার্থের দিকটিও অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নতুন বছরে স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা 'ঠিক কোন ধরনের' বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ায় আগ্রহী। মানে সম্পর্ক চুকিয়ে দেওয়াটা যে কোনও অপশন নয় – প্রকারান্তরে দিল্লিও সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে।

 

পাশাপাশি গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর প্রধান কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যে ধরনের বার্তা এসেছে, সেটাকেও ভারত বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যে ভারত-বিরোধী 'রেটোরিক' থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে এটা একটা ভাল লক্ষণ, যা সুস্থ ও স্বাভাবিক সম্পর্কের পথ প্রশস্ত করতে পারে।আর অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে – সেটা খানিকটা 'অটো পাইলট' মোডে বা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই চলতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাতে দু'পক্ষের সরকারি হস্তক্ষেপের হয়তো তেমন প্রয়োজন হবে না।

 

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নিয়ে দিল্লিতে সরকার ও বিশ্লেষকরা কী ভাবছেন, তারই অনুসন্ধান থাকছে এই প্রতিবেদনে।

 

দিল্লির সাউথ ব্লক যা বলছে

ভারত ঠিক কী ধরনের বাংলাদেশ দেখতে চায়, এর জবাবে শেখ হাসিনার আমলে সাউথ ব্লক (যেখানে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বারবার যে কথাটা বলত - তা হল তারা একটি 'শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল' বাংলাদেশের পক্ষে এবং আমেরিকাকেও সে বক্তব্য জানানো হয়েছে।এই কথাটাকে অবশ্য শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থন হিসেবেই দেখা হত।কারণ, তার আমলেই বাংলাদেশ এই বিশেষ মাইলস্টোনগুলো অর্জন করেছে – ভারত সেটাও বিশ্বাস করত প্রবলভাবে।গত ৩ জানুয়ারি (শুক্রবার) দিল্লিতে

 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিং-এ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে মুখপাত্র নতুন দু'টো শব্দ যোগ করেন।মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল একটি প্রশ্নের জবাবে বলেন, "ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের পরই প্রেস বিবৃতির আকারে এই মনোভাব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, ভারত একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশকে সমর্থন করে।"

 

"এটাও বলা হয়েছে যে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়তে চাই, যা হতে হবে পারস্পরিক আস্থা, মর্যাদা, স্বার্থ ও একে অপরের উদ্বেগগুলো নিয়ে সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে।"বছরখানেক আগেকার চেয়ে ভারতের এই বক্তব্যে নতুন শব্দ দু'টো হচ্ছে – গণতান্ত্রিক আর ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক)।বাংলাদেশ দ্রুত গণতান্ত্রিক পরম্পরায় ফিরুক এবং মানুষের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার সে দেশে ক্ষমতায় আসুক, প্রথম শব্দটির মধ্যে দিয়ে ভারত সেটাই বোঝাতে চেয়েছে বলে দিল্লিতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।আর 'অন্তর্ভুক্তিমূলক' কথাটার মধ্যে দিয়ে সে দেশের সমাজজীবনে সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং রাজনীতিতে সব ধরনের শক্তিকে ঠাঁই দেওয়ার কথাই বলতে চাওয়া হয়েছে বলে তারা ব্যাখ্যা করছেন।

 

কিন্তু নতুন দু'টো শর্ত যোগ করার চেয়েও যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, পাঁচ অগাস্টের পর এই প্রথম ভারত প্রকাশ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি 'ইতিবাচক ও গঠনমূলক' সম্পর্ক গড়ে তোলার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।গত বেশ কয়েক মাস ধরে সংখ্যালঘু নির্যাতন, আকস্মিক বন্যা ঘটানোর অভিযোগ ইত্যাদি ইস্যুতে লাগাতার সমালোচনা বা দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে বৈঠকের অনুরোধ নাকচ করার পর দিল্লির দিক থেকে এই পদক্ষেপ অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।

 

'পাকিস্তানকে নিয়ে সাবধান থাকতে হবে'

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ তথা ঢাকায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ভিনা সিক্রি মনে করেন, ভারত যে বাংলাদেশের সঙ্গে সহজ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক চায় এর মধ্যে কোনও ভুল নেই – তবে এখন কয়েকটি বিষয় নিয়ে দিল্লিকে সাবধান থাকতে হবে।বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, "বাংলাদেশ কিন্তু বরাবরই আমাদের জন্য একটি 'প্রায়োরিটি কান্ট্রি' ছিল, এখনও তাই আছে – কিন্তু এই সম্পর্ককে আমরা তখনই অগ্রাধিকার দেব যখন এটা উভয়ের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।"

 

গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের মধ্যে দিয়ে ভারত ঠিক এই বার্তাই দিয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।"তবে এখানে কয়েকটি 'যদি' বা 'কিন্তু' আছে। যেমন ধরুন, পাকিস্তান যেভাবে এই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাইছে সেটা ভারতের জন্য কিন্তু একটা 'রিয়াল' সিকিওরিটি থ্রেট বা সত্যিকারের নিরাপত্তাগত হুমকি।"

 

"বাংলাদেশের মাটিকে পাকিস্তান যে কোনওভাবে ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে বা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ব্যবহার করবে না, সেটা নিয়ে শতকরা একশোভাগ নিশ্চিত হতে পারলে তবেই ভারত এই সম্পর্ক নিয়ে এগোতে পারবে", বলেন ভিনা সিক্রি।এর পাশাপাশি ভারত আরও দুটো 'শর্তে'র ওপর জোর দিতে চাইবে বলেও তার পর্যবেক্ষণ।ভিনা সিক্রির কথায়, "যত দ্রুত সম্ভব সে দেশে নির্বাচন আয়োজনের ওপর ভারত জোর দেবে। শুধু তাই নয়, সে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হতে হবে, এবং তাতে সব দল ও মতাবলম্বীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।"

 

"দ্বিতীয়ত, হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রশ্নেও বাংলাদেশ সরকারের একটা 'রিয়ালিটি চেক' করা দরকার, অর্থাৎ বাস্তবতাটা মেনে নেওয়া প্রয়োজন। সব কিছু ভারতীয় মিডিয়ার অতিরঞ্জন বলে তারা ঢালাওভাবে অস্বীকার করে যাবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না!"এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে 'অগ্রগতি' হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের পালেও আবার হাওয়া লাগা সম্ভব, ভিনা সিক্রির সেটা বলতেও কোনও দ্বিধা নেই।

 

'ঠান্ডা জল ঢালতে পারে আওয়ামী লীগ ইস্যু'

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা করছেন ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত, তিনি কিন্তু এই সম্পর্কে চট করে নাটকীয় উন্নতি হবে বলে তেমন আশাবাদী নন।"প্রথম কথা হল, আমি অন্তত সম্পর্ক শোধরানোর জন্য ভারতের দিক থেকে তেমন তাগিদ দেখছি না। এ ব্যাপারে কোনও বিশেষ প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা হয়েছে বলেও জানা নেই।"

 

"তবে হ্যাঁ, ভারত আবার আগের মতো বাংলাদেশে আলু-পেঁয়াজ বা চাল পাঠাতে শুরু করেছে এটা ঠিক। কিন্তু দুই সরকারের মধ্যে যে পর্যায়ের এনগেজমেন্ট আগে ছিল, তার ছিটেফোঁটাও কিন্তু এখন নেই", বিবিসিকে বলছিলেন ড: দত্ত।কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সম্প্রতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছু 'ভয়েস অব স্যানিটি', অর্থাৎ 'সুবিবেচনা ও বিচক্ষণতার কণ্ঠস্বর' যে শোনা গেছে, তিনিও সে কথা মানেন।বাংলাদেশের সোনপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি যা বলেছেন, তারও ভূয়সী প্রশংসা করছেন শ্রীরাধা দত্ত।"

 

কিন্তু মুশকিলটা অন্য জায়গায়।ভারত অবশ্যই সে দেশে দ্রুত নির্বাচনের জন্য জোর দেবে এবং চাইবে আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে লড়ার সুযোগ পাক। "আমার আশঙ্কা হল, বাংলাদেশ যদি নির্বাচনের আগে (ভারতের পছন্দ অনুযায়ী) সেই আওয়ামী লীগ ইস্যুটার নিষ্পত্তি করতে না পারে, তাহলে ভারত হয়তো আবার বেঁকে বসবে এবং অসহযোগিতার রাস্তায় হাঁটবে", বলছিলেন তিনি।

 

এর পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে বিচারের জন্য ফেরত দেওয়ার প্রশ্নেও ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে অস্বস্তি থাকবে অবধারিত।শ্রীরাধা দত্তর কথায়, "নোট ভার্বালের কিছুদিন পর হয়তো দেখব নতুন করে ঢাকার তাগাদা এলো।""কিন্তু আমরা তো জানি, ভারত শেখ হাসিনাকে কিছুতেই প্রত্যর্পণ করবে না, ফলে আমার ধারণা, সম্পর্ক আবার সেই শীতলতার দিকেই যাবে।"

 

'বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে দু'তরফেই'

তবে, অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, সব ধরনের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক বা স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে শুধু যে বিষয়টা দিল্লি ও ঢাকাকে আবার কাছাকাছি আনতে পারে, তা হল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা।তারা বলছেন এটি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পারস্পরিক নির্ভরতা গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে – এবং দুই দেশের স্বার্থেই সেটা বজায় রাখাটা জরুরি।দিল্লিতে প্রথম সারির থিঙ্কট্যাঙ্ক আরআইএসে অধ্যাপনা করেন অর্থনীতিবিদ প্রবীর দে।

 

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও কানেক্টিভিটি নিয়েও তিনি কাজ করছেন বহু বছর ধরে।ড: দে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "বাংলাদেশে প্রায় কুড়ি কোটি মানুষের একটা বাজার ভারত যেমন কখনওই ছাড়তে চাইবে না বা ছাড়া উচিত হবে না, তেমনি বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বা ভারী সরঞ্জাম আমদানির জন্য বাংলাদেশও ভারতের চেয়ে ভাল উৎস আর পাবে না।"এই অর্থনৈতিক বাস্তবতাই দুটো দেশকে শেষ পর্যন্ত কাছাকাছি রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।"তবে এটা তো মানতেই হবে পাঁচই অগাস্টের মতো পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই, এখন একটা 'নিউ নর্মাল' পর্বে আমরা প্রবেশ করেছি।"

 

"সেখানে হয়তো সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার একটা ক্যালিব্রেটেড বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে, যেটা বাইরে থেকে আমরা অতটা বুঝতে পারছি না", বলছিলেন প্রবীর দে।

 

প্রসঙ্গত, গত অগাস্টে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর ঠিক সেই মাসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ অনেকটা কমে গেলেও পরে কিন্তু ধীরে ধীরে তা আবার আগের পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে।দিল্লিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানও সে কথাই বলছে।"তবে কী, সাধারণত যেটা হয়, বাণিজ্যে হঠাৎ করে ভাঁটা পড়ার পর আবার তা শুরু হলে পরিসংখ্যানে একটা ক্যামোফ্লেজিং থাকে।মানে দু'জনেরই তখন খিদে আছে, তাই খেতে বসলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যায়!"

 

"ফলে এই পরিসংখ্যান থেকে আমি এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে রাজি নই, বরং আমি চলতি বছরের (২০২৫) প্রথম কোয়ার্টারের (জানুয়ারি থেকে মার্চ) ট্রেড ফিগারের জন্য অপেক্ষা করতে চাই", বলছিলেন ওই অর্থনীতিবিদ।তবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে এখনও সীমান্ত খোলা ও স্থলবন্দরগুলো চালু, জিনিসপত্র যাওয়াআসা করছে, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বা কোনও সরকারই কোনও বাণিজ্যিক কনসাইনমেন্ট বাতিল করেনি – এটাকেও তিনি খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন।প্রবীর দে আরও বলছিলেন, "পাশাপাশি দেখুন, সম্ভবত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই বাংলাদেশের রফতানিমুখী শিল্পগুলো কিন্তু মার খাচ্ছে।দিল্লি থেকে বিমানে তারা যে পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রফতানি শুরু করছিলেন, সেটাও এখন প্রায় বন্ধ।"

 

"অন্য দিকে ভারতের এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল জানাচ্ছে, শুধু নভেম্বরেই তাদের রেডিমেড গারমেন্ট রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় দশ শতাংশ। কাদের ক্ষতির বিনিময়ে তারা এই বাড়তি মুনাফা করছেন, সেটা আন্দাজ করা কঠিন নয়!"ফলে তার যুক্তি, বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার 'তাগিদ' শুধু ভারত নয় – বাংলাদেশের দিক থেকেও থাকবে এবং উভয় দেশেরই উচিত হবে এই পরিস্থিতির সুযোগটা কাজে লাগানো।

 

প্রবীর দে আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশে ভারত যে সব অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে কাজ করছিল তার কাজ থমকে গেলেও ভারত কিন্তু সেগুলো থেকে সরে আসেনি বা বাতিল করে দেয়নি।"যেমন আশুগঞ্জ-আখাউড়া হাইওয়ে নির্মাণই বলি, কিংবা এসিএমপি (ভারতের জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সমঝোতা) – এগুলো কিন্তু পরিত্যক্ত হয়নি, যে কোনও সময় আবার শুরু হতে পারে বলেই আমরা শুনতে পাচ্ছি", বলছিলেন তিনি।ফলে ভারতের দিক থেকে ধীরে ধীরে হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বিক সম্পর্ক সহজ করার একটা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, যদিও সেটার পরিণতি সম্ভবত নির্ভর করবে আগামী কয়েক মাসে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কী ফয়সালা হয় তার ওপর। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টানা তৃতীয়বারের মতো সুপার কাপের ফাইনালে বার্সালোনা

টানা তৃতীয়বারের মতো সুপার কাপের ফাইনালে বার্সালোনা

ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট

ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট

কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি

কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল

পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের

পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের

ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ

ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ

আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ

আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ

পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি

পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি

বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০

বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন

বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-

বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-

মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান

মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান

৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি

ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি

ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী

ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী

ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস

ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস

সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের

সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের

‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান

‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত

সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া